বাংলাদেশের বাজারে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সব মাছ শতভাগ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটি দাবি করছে, বাংলাদেশের বাজারে যেসব মাছ আসে সেসব মাছের মধ্যে সীসা বা লেড এবং ক্রোমিয়াম ও পারদ রয়েছে যেটা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ঢাকার মাছের বাজারে ইদানিংকালে বিদেশ থেকে আমদানি করা মাছ বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
মাছের মধ্যে ক্ষতিকর এসব রাসায়নিক থাকার কথা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না মাছ-বিক্রেতারাও ।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঢাকার অভিজাত একটি এলাকায় মাছের বাজারে ওঠে নানা ধরণের মাছ, বিক্রেতারাও খদ্দের আকৃষ্ট করতে নানাধরনের প্রলোভন দেখান।
প্রায় সব বিক্রেতার মুখেই শোনা গেল এগুলো নদীর মাছ, পুকুরের মাছ এবং অবশ্যই দেশি।
কিন্তু কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে জানতে পারলাম এই বাজারে বিদেশি মাছও রয়েছে। একজন দোকানি তার দোকানে থাকা দুইটি বড় সাইজের বার্মিজ রুই দেখিয়ে বলছিলেন অনেক ক্রেতাই দেশি আর বিদেশি মাছের পার্থক্য বোঝে না।
একজন বিক্রেতা বলছেন “মনে করেন দেশি মাছের দাম বেশি, বিদেশি মাছের দাম কম। বেশি দামে মাছ কিনতে চায় না তারা। আমাদেরও বেচার জন্য তখন বিদেশি মাছকে দেশি মাছ বলতে হয়।”
বাংলাদেশ মূলত ওমান, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত মিয়ানমার থেকে মাছ এবং মাছ-জাত পণ্য আমদানি করছে।
রুই, বোয়াল মাছ যেমন আসছে, তেমনি ইলিশ মাছের মত দেখতে চন্দনা বা চান্দিনা নামের এক ধরণের মাছ আসছে যেটা আসলে ইলিশ না।
অনেক ক্ষেত্রে পহেলা বৈশাখকে টার্গেট করে এই নকল ইলিশ মাছ বাংলাদেশের বাজারে আসে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এসব মাছের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সরকারের একটি সংস্থা, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা মাহবুব কবির মিলন বলেছেন, এই মাছগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে এতে ক্ষতিকর যেসব রাসায়নিক রয়েছে যেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকির কারণ।
“বাজারে যে মাছগুলো রয়েছে সেগুলোতে হেভি মেটাল পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো মারাত্মক। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে যে লিমিট ঠিক করে দেয়া আছে সেটা হল ০.৩ ??। কিন্তু আমরা মাছ টেস্ট করে পেয়েছি চার,পাঁচ গুণ বেশি রাসয়নিক। এই জিনিসগুলো তো আমাদের শরীরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
বাংলাদেশের মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, বছরে প্রায় গড়ে ৫০,০০০ টন মাছ বাংলাদেশ আমদানি করে।
জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ ২০০০ সালে প্রায় ২৬ কোটি টাকার মাছ এবং মাছ জাত দ্রব্য আমদানি করেছে। ২০১৫ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা।
কীভাবে মাছ গুলো এতটা দূষিত হচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎসবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মো.মনিরুল ইসলাম বলছেন, মাছ চাষের পদ্ধতির ওপর দূষণের মাত্রা নির্ভর করে।
“এটা নির্ভর করছে যেদেশ থেকে মাছ আনছে সেদেশে চাষ পদ্ধতিটা কী ধরণের তার উপরে। সীসার মাত্রা যেহেতু বেশি তার মানে পানি এবং মাছের খাবারে ভেজাল ছিল। এই মাছ গুলো যদি না খেয়ে ফেলে দেয়া হয়, সেটাও পরিবেশের ক্ষতি করবে,” বলেন মি: ইসলাম।
এদিকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এ চিঠিতে আমদানিকৃত এসব মাছের চালান ল্যাবরেটরি টেস্টের ফলাফল ছাড়া খালাস না করার আহ্বান জানিয়েছে।
ক্ষতিকর রাসায়নিক যুক্ত বিদেশি মাছ চিনতে না পারার ব্যাপারে এবং এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে আমদানিকৃত সব প্রকার মাছ বন্দর থেকে খালাসের আগে অ্যাটমিক এনার্জি সেন্টার, বিসিএসআইআর, বা ফিশ কন্ট্রোল ল্যাব, থেকে পরীক্ষা করে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ও মার্কারির পরিমাণ মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার ভেতর পাওয়া গেলে তবেই মাছ খালাসের অনুমতি প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র, বিবিসি